রুবেল ইসলাম, নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ঃ
প্রক্সি জালিয়াতির মাধ্যমে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক প্রথম বর্ষের গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাককানইবি) ভর্তির অভিযোগে দুই জালিয়াতি চক্রের সদস্য ও এক ভর্তিচ্ছুকে আটক করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। আটক ব্যক্তিদের পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছে।
আটককৃতরা হলেন— মো. পনির উদ্দিন খান পাভেল (ঢাকার বিক্রমপুর) ও সালমান ফারদিন সাজিদ সিয়াম (ময়মনসিংহ, চরপাড়া)। সিয়াম জাককানইবির আইন ও বিচার বিভাগের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি পাভেলের সঙ্গে আর্থিক চুক্তির মাধ্যমে প্রক্সি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন।
এছাড়া আটক ভর্তিচ্ছু ওবায়েদ হাসান আফিক (জিএসটি রোলঃ ২০১৬৯৭, মেরিট পজিশনঃ ৭৬) ত্রিশালের স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা জাহাঙ্গীর আলমের ছেলে।
বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) চূড়ান্ত ভর্তির শেষ দিনে আফিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ভর্তি হতে গেলে সন্দেহের সৃষ্টি হয়। সাক্ষরে গড়মিল পাওয়া এবং ভর্তি পরীক্ষাসংক্রান্ত সাধারণ প্রশ্নের উত্তর দিতে ব্যর্থ হওয়ায় শিক্ষকরা তার অভিভাবককে ডাকেন। তখন আফিক ‘বড় ভাই’ পরিচয়ে পাভেলকে নিয়ে আসে। কথোপকথনে অসঙ্গতি ধরা পড়লে এবং আফিকের ফোন চেক করে পাভেলের সঙ্গে ভর্তির আর্থিক লেনদেনের প্রমাণ মেলে।
পাভেলের আইফোন তল্লাশি করে ব্যাংক, বিসিএসসহ বিভিন্ন সরকারি নিয়োগ ও গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার অ্যাডমিট কার্ড, প্রার্থীদের ছবি এবং হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের মাধ্যমে একটি বড় প্রক্সি জালিয়াতি চক্রের সংশ্লিষ্টতার তথ্য পাওয়া যায়। তবে ফোনটি হঠাৎ লক হয়ে যাওয়ায় সব তথ্য উদ্ধার সম্ভব হয়নি।
ঘটনার সময় পাভেলের ফোনে সিয়ামের কল আসে, যেখানে তিনি আফিকের ভর্তির বিষয়ে জানতে চান। পরবর্তীতে সিয়ামের পরিচয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাটাবেজে মিলিয়ে দেখা হয় এবং তাকে ডেকে এনে আটক করা হয়।
জানা গেছে, এই চক্র দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা, বিসিএস, ব্যাংকসহ সরকারি চাকরির পরীক্ষায় প্রক্সি দিয়ে আসছে। গাজীপুরের টঙ্গীর বাসিন্দা ‘বাবু ভাই’ নামের এক ব্যক্তি এ চক্রের মূল হোতা বলে তথ্য মিলেছে। এমনকি এতে কিছু বিসিএস ক্যাডার কর্মকর্তা ও সরকারি বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিদের সংশ্লিষ্টতার তথ্যও পাওয়া গেছে।
এই চক্রের মাধ্যমে জাককানইবির লোকপ্রশাসন ও সরকার পরিচালনা বিদ্যা বিভাগে কৌশিক কুমার চন্দ্র (জিএসটি রোল: ২০৪৩৯৩) এবং টাঙ্গাইলের মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে পূণ্য দে মৃধু ভর্তি হয়েছে। সিয়াম স্বীকার করেছেন, ১ লাখ টাকা চুক্তিতে তিনি কৌশিকের বদলে ভর্তি পরীক্ষায় প্রক্সি দেন। তবে আফিক ও পূণ্য দে মৃধুর হয়ে কারা প্রক্সি দিয়েছে তা এখনও জানা যায়নি।
জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা গেছে, গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রক্সি পরীক্ষা সবই জামালপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হয়।
জাককানইবির কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. মো. সুজন আলী বলেন, “পাভেলের আইফোনে আমরা বিভিন্ন নিয়োগ ও গুচ্ছ পরীক্ষার অ্যাডমিট কার্ড, প্রার্থীর ছবি এবং একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ পেয়েছি, যেখানে বিসিএস ক্যাডারসহ অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তি যুক্ত। ফোনটি লক থাকায় অনেক তথ্য উদ্ধার সম্ভব হয়নি। ফোনটি আনলক করা গেলে আরও তথ্য পাওয়া যাবে।”
আফিক জানান, বন্ধুদের মাধ্যমে পাভেলের সঙ্গে তার পরিচয় হয় এবং বাবার সঙ্গে পাভেলের ১ লাখ টাকায় ভর্তি করানোর চুক্তি হয়। বৃহস্পতিবার ভর্তি সম্পন্ন হওয়ার পর পাভেলকে টাকা দেওয়ার কথা ছিল।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “ঘটনাটি জামালপুরে ঘটেছে, কিন্তু আমাদের সবার সতর্কতার কারণে ধরা পড়েছে। আমরা তদন্ত কমিটি গঠন করছি এবং পুলিশ প্রশাসনের সহযোগিতায় পুরো চক্রের সন্ধান করব।”