মো: ফেরদৌস ওয়াহিদ সবুজ, বীরগঞ্জ (দিনাজপুর) প্রতিনিধি
দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার গোলাপগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত হলো ঐতিহাসিক আদিবাসী মিলন মেলা। এ মেলায় সাঁওতাল সম্প্রদায়ের মেয়েরা জীবনসঙ্গী খোঁজার উদ্দেশ্যে হাতে চুড়ি, কপালে টিপ, রঙিন শাড়িতে অপরূপ সাজে হাজির হয়।
শুক্রবার বিকাল ৫টা থেকে রাত পর্যন্ত নিজপাড়া ও মোহনপুর ইউনিয়ন পরিষদ এবং বীরগঞ্জ আদিবাসী সমাজ উন্নয়ন সমিতির আয়োজনে এই মিলনমেলা, নাচ-গানের আসর ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন আদিবাসী সমাজ উন্নয়ন সমিতির নেতা যোসেফ হেমরম। প্রধান অতিথি ছিলেন কৃষক দল কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও বীরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি, দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী আলহাজ্ব মঞ্জুরুল ইসলাম মনজু।
বিশেষ অতিথি ছিলেন মোহনপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শাহিনুর রহমান চৌধুরী শাহিন, কারিতাসের আঞ্চলিক পরিচালক রবিন মার্ডি, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্টের আহ্বায়ক মনোজ কুমার রায়।
মেলার ইতিহাস প্রসঙ্গে স্থানীয়রা জানান, ইতোপূর্বে তরুণ-তরুণীরা পছন্দের জীবনসঙ্গী খুঁজে পেলে পরিবারকে জানাতেন এবং পরের বছর মেলায় তাঁদের নাম-পরিচয় তুলে ধরে বিয়ের আয়োজন করা হতো। বর্তমানে সেই হৈচৈ কিছুটা কমে এলেও শতবর্ষের ঐতিহ্য এখনও ধরে রেখেছে আয়োজকেরা।
আদিবাসী নেতা যোসেফ হেমরম জানান, মেলা উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ছুটে আসে আমাদের সম্প্রদায়ের মানুষ। দিনাজপুর ছাড়াও পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, নীলফামারী, জয়পুরহাট ও নওগাঁ থেকেও বহু মানুষ এ মিলন মেলায় অংশ নেয়।
মেলায় নতুন জুটি হিসেবে হরিপুরের চিন্তামনি হাসদা (১৯) ও মোহনপুরের হোপনা সরেন (২৫) একে অপরকে পছন্দ করেছে বলে তাঁদের অভিভাবকরা জানান। রীতি-নীতি মেনে তাঁদের বিয়ের আয়োজন হবে বলেও তারা সম্মতি প্রকাশ করেন।
প্রতিবছর এ মেলায় দুইশ’ থেকে আড়াইশ’ জুটি বিয়ে হয় বলে জানান সাবেক আদিবাসী সমাজ উন্নয়ন সমিতির চেয়ারম্যান বাজুন বেসরা ও শীতল মার্ডি। তাঁদের মতে, এবার বিয়ের সংখ্যা আরও বাড়বে।
মেলাকে ঘিরে বিদ্যালয়ের মাঠে দেড় সহস্রাধিক দোকান বসে। জিলাপি, নিমকি, পিঠা, ফুচকা, চটপটি, মেয়েদের গহনা, প্রসাধনী, শিশুদের খেলনা, গৃহস্থালির সরঞ্জাম, মাটির তৈরি জিনিসসহ নানা পণ্যের পসরা নিয়ে জমজমাট হয়ে ওঠে পুরো গোলাপগঞ্জ বাজার এলাকা। বিদ্যালয়ের মাঠ ও আশপাশের এলাকা পরিণত হয় জনসমুদ্রে।
শত বছরের ঐতিহ্য ধরে রাখা এই মেলা আজও আদিবাসী সমাজের মিলন ও সাংস্কৃতিক বন্ধনের প্রতীক হয়ে আছে।