ডেক্স রিপোর্ট
হুবাহুব লেখা তুলে ধরলাম
বহু আগ থেকেই বলে এসেছি বাংলাদেশের রাজনীতির নিয়ন্ত্রণ বাংলাদেশীদের হাতে নেই। ৪৭ এর আগ থেকে আজ পর্যন্ত এদেশের রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ বিদেশীদের হাতেই ছিলো, বিশেষ করে পশ্চিমা অপশক্তির হাতে।
২৪ এর ৫ই আগষ্টের অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে এই কথাগুলো যখন বলতাম অনেকেই ভাবতো এগুলো পাগলের প্রলাপ কিংবা দলীল প্রমাণ, যুক্তিহীন বক্তব্য। কিন্তু হালনাগাদ বিষয়টি একেবারেই স্পষ্ট।বাংলাদেশের রাজনৈতিক চরম ক্রান্তিকালে ড. ইউনুস লন্ডনে। আর সেখানে তারেক জিয়ার সাথে তার বৈঠকও নির্ধারণ করা হয়েছে আগামী ১৩ তারিখ। বাংলাদেশের যত টকশোতে টকারুরা বক্তব্য রাখেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক, বুদ্ধিজীবী, কলামিস্ট সকলেই এখন অধীর অপেক্ষায় আছে যে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকট নিরসন হবে লন্ডনে ড. ইউনুস ও তারেক জিয়ার বৈঠকের পর।
এতে কি একথা প্রমাণ হয় না যে, বাংলাদেশের রাজনীতির নিয়ন্ত্রণ বাংলাদেশীদের হাতে নয়? অন্ধ বধির সংকীর্ণ মনের অধিকারী মানুষগুলো না বুঝলেও ঈমানদার জ্ঞানসম্পন্ন বিবেকবানদের কাছে বিষয়টি সুস্পষ্ট। ২৪ এর ৫ই আগষ্ট অভ্যুত্থান পরিবর্তী সময়ে ভারত আমাদের কাছে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত হয়েছে। ব্যবসায়িকভাবে বাংলাদেশের সাথে তার সম্পর্ক খারাপ। আর আমি বরাবরই বলে এসেছি ভারতের হিন্দুত্ববাদী সরকার বাংলাদেশের সাথে যে শত্রুতা সুলভ মনোভাব রাখে তার একটাই কারণ যে, বাংলাদেশ একটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্র। কিন্তু বাংলাদেশে সামরিক হস্তক্ষেপ করে তার নিজের ধ্বংস ডেকে আনার মতো ভুল সিদ্ধান্ত কখনোই ভারত নেবে না, তা আমরা বরাবরই বলে এসেছি। আর আমি একথাও আগে বলেছি যে, বিগত ১৬ বছর ফ্যাসিবাদী সরকারকে যত সহযোগিতা করেছে হিন্দুত্ববাদী ভারত সরকার; সেটাও হয়েছে পশ্চিমাদের ইশারা ইঙ্গিতে ও মৌন সমর্থনে। কারণ স্টেট ডিপার্টমেন্ট দক্ষিণ পূর্ব এশিয়াতে ভারতকে চামুন্ডা হিসেবে ব্যবহার করে থাকে এবং বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চিরশত্রু চায়নার বিপক্ষে ভারতকে কাজে লাগাবার চেষ্টা করে। সেটা একটি ভিন্ন আলোচনা পরে বলা যাবে।
কিন্তু এখন জাতী হিসেবে আমাদের করণীয় কি? আমরা কি আদৌ স্বাধীন হতে পেরেছি ? ৪৭-এ কিংবা ৭১-এ কিংবা ২৪-এ আমরা কিন্তু কখনোই কাঙ্খিত স্বাধীনতা অর্জন করতে পারিনি। ৪৭-এ যখন দেশ বিভক্ত হলো, কয়েক বছর পর্যন্ত পাকিস্তান ও ভারত ছিল ডোমিনিয়ন স্টেট। পরবর্তীতে পাকিস্তান এবং ভারত যখন তাদের নিজস্ব আইন এবং সংবিধান রচনা করলো তখন তারা রাষ্ট্রের মর্যাদা পেলেও চতুর বৃটিশ সরকার কমন ওয়েলথ ভুক্ত করে পাকিস্তান ভারত এবং পরবর্তীতে পাকিস্তান থেকে সদ্য স্বাধীন হওয়া বাংলাদেশকে পরাধীনতার শৃঙ্খলেই আবদ্ধ করে ফেলেছে। সেজন্য সাব কন্টিনেন্টের এই তিনটি দেশের স্বাধীন কোন পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করার সুযোগই নেই। তারা কোনো না কোনোভাবে পশ্চিমাদের বিশ্ব ব্যবস্থার অধীনেই তাদেরকে থাকতে হয়। তাহলে একথা সুস্পষ্ট যে, আমাদের বাংলাদেশ তখনি পূর্ণাঙ্গভাবে স্বাধীন হবে যেদিন বাংলাদেশ নিজস্ব স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি রচনা করতে পারবে, বাংলাদেশের অর্থনীতি হবে টেকসই, শিক্ষাব্যবস্থা হবে ঈমান ও নৈতিকতার মানদন্ডে উত্তীর্ণ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নির্ভর; আর এসব কিছু অর্জন করার জন্য অবশ্যই বাংলাদেশের রাজনীতিকে পশ্চিমাদের নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত করতে হবে। সেটার জন্য হয়তোবা আরেকটি বিপ্লবের প্রয়োজন হতে পারে। পশ্চিমা নিয়ন্ত্রণ থেকে যতদিন পর্যন্ত বাংলাদেশের রাজনীতিকে মুক্ত করা না হবে ততদিন পর্যন্ত বাংলাদেশে হাজারো সংস্কার করার মাধ্যমে এদেশের মানুষের রাজনৈতিক মুক্তি, অর্থনীতিক মুক্তি, শিক্ষা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে বিপ্লব, স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারণ, টেকসই অর্থনীতি গঠন এগুলো আদৌ সম্ভব হবে না। দেরিতে হলেও বাংলাদেশের সমাজ সচেতন ব্যক্তিবর্গ কথাগুলো অনুধাবন করতে পারবে বলে আমাদের বিশ্বাস।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, পশ্চিমা বলয় থেকে বের হওয়ার উপায় কি? এর জবাব হচ্ছে পশ্চিমাদের রাজনৈতিক সভ্যতা ও সংস্কৃতির বলয় থেকে বেড়িয়ে আসতে হবে। সেজন্য প্রথমেই তথাকথিত পশ্চিমা মডেলের গণতন্ত্রকে বর্জন করতে হবে এবং পশ্চিমা সভ্যতা যা পুরোটাই ভঙ্গুর মিথ্যা আশ্রিত এবং ডেভিল পলিসি দ্বারা পরিচালিত তা বাদ দিতে হবে। উল্লেখ্য- পশ্চিমাদের সভ্যতা ও রাজনীতি তিনটি ভিত্তির উপর গড়ে উঠেছেঃ - (১) ধ্বংসপ্রাপ্ত রোমান সভ্যতা (২) মিথ্যা আশ্রিত খ্রিস্টধর্ম (৩) সোফিস্টদের আমদানি করা গ্রীক দর্শন। অতএব এ ৩টি ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত পশ্চিমা সভ্যতা, না পশ্চিমাদেরকে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মুক্তি দিতে পেরেছে আর না তাদের অনুসারীদেরকে মুক্তি দিতে পেরেছে।
অতএব, আমাদের মুক্তির একটাই পথ সেটা হচ্ছে; পশ্চিমা বিশ্বব্যবস্থার বলয় থেকে বেড়িয়ে আসতে হবে এবং কুরআন ও সুন্নাহ ভিত্তিক একটি শরীয়া রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। এছাড়া এ জাতির ভবিষ্যৎ শুধু অনিশ্চিত নয়, অসম্ভব।
___ড. এনায়েতুল্লাহ আব্বাসী
সম্পাদক : মোঃ জহির , উপদেষ্টা : জসিম উদ্দিন খোকন ,বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: ফোন: 𝟎𝟏𝟔𝟐𝟗𝟏𝟎𝟎𝟗𝟐𝟔
বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: 𝟎𝟏𝟔𝟎𝟖𝟔𝟗𝟕𝟖𝟗𝟗
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত