এটিএম মাজহারুল ইসলাম চান্দিনা:-
মৃত আবদুল মজিদের ছেলে শবদর আলী (৪৫) ফজর নামায পড়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হয়ে আর ফিরে আসেনি। সকাল ৮:৩০টা পর্যন্ত তার স্ত্রী ও সন্তানরা যখন শবদর আলীকে খুঁজে পাচ্ছেনা ঠিক তখনই পাশের বাড়ির ইউনুছ মিয়া এসে বলে শবদর আলী আমাদের বাড়ির পুকুর পাড়ের আম গাছের সাথে ফাঁসি দিয়েছে।
ঘটনাটি ঘটেছে ১৫ এপ্রিল ২০২৫ইং (শনিবার) কুমিল্লা চান্দিনা উপজেলার বরকইট গ্রামের জনাফরা বাড়ির মৃত আহাম আলীর বসত বাড়ির উত্তরের পুকুর পাড়ে। আম গাছের সঙ্গে প্লাস্টিকের দড়ি গলায় পেঁচিয়ে ঝুঁলে আছে শবদর আলী এবং পা দুটি হাঁটু ভাঙ্গা অবস্থায় মাটিতে লেগে ছিল। খবর পেয়ে চান্দিনা থানা পুলিশ মৃত শবদর আলীকে উদ্ধার করে পোস্ট মর্টেমের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করে এবং এ ঘটনায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছিল।
প্রায় তিন মাস পর শবদর আলীর পোস্ট মর্টেম রিপোর্ট ঐ মামলার দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক মোঃ ইমাম হোসেনের নিকট আসার পর তিনি রিপোর্ট পড়ে বুঝতে পারেন শবদর আলীকে শ্বাসরুদ্ধ করে মেরে আম গাছে ঝুঁলিয়ে রাখা হয়েছিল। তাৎক্ষণিক বিষয়টি চান্দিনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাবেদ উল ইসলামকে বিষয়টি জানালে তিনি দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলেন। অত:পর মৃত শবদর আলীর স্ত্রী রিনা বেগম চান্দিনা থানায় এসে ১০ জুলাই ২০২৫ইং (বৃহস্পতিবার) রাতে ৫ জনকে আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
হত্যা মামলা দায়ের করার পর মামলার দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক মোঃ ইমাম হোসেন কুমিল্লা পুলিশ সুপার জনাব মোহাম্মাদ নাজির আহমেদ খাঁন ও চান্দিনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাবেদ উল ইসলামের দিক নির্দেশনায় ১1 জুলাই ২০২৫ইং (শুক্রবার) রাত ২টায় অভিযান পরিচালনা করে ৩জন আসামীকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। গ্রেফতারকৃত আসামীদ্বয় হলেন, চান্দিনা উপজেলার বরকইট জনাফরা বাড়ির মৃত আহাম আলীর ছেলে ইউনুছ মিয়া (৫২), আবুল হাশেম (৪২) ও কুদ্দুছ (৫৫)।
মৃত শবদর আলীর স্ত্রী রিনা বেগম জানায়, বিবাদীগণ আমার স্বামীর নিকট হইতে মৌখিক এক বছর চুক্তির মেয়াদে জমি বন্ধক বাবদ ৩ (তিন) লক্ষ টাকা নেয়। চুক্তির এক বছর মেয়াদ অতিবাহিত হওয়ার পরপরই বিবাদীগণ তাদের জমি নিয়ে চাষাবাদ করতে থাকে কিন্তু আমার স্বামীর পাওনা ৩ (তিন) লক্ষ টাকা পরিশোধ না করিয়া দেম-দিচ্ছি ঘুরাইতে থাকে। আমার স্বামীর হত্যার ১ সপ্তাহ পূর্বে বিবাদীদের নিকট পাওনা টাকা চাইলে আমার স্বামীকে মারধর করতে থাকে এবং তার শৌরচিৎকারে শুনে আমার ছেলে মাজহারুল, ভাসুর ফকির মিয়া ও তার ছেলে এমরানকে নিয়ে ঘটনাস্থলে যাই। যাওয়ার সাথে সাথে বিবাদীগণ আমাদেরকেও মারধর করতে থাকে এবং মারধর করার কারণে আমার ছেলে মাজহারুলের হাত ভেঙ্গে যায় এবং ভাসুর ফকির মিয়া ও তার ছেলে এমরান নীলাফুলা জখম হয়। তাৎক্ষণিক এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গকে জানাইলে, তারা বলে শালিশ দরবার করে দিবে। কিন্তু বিবাদীগণ শালিশ দরবারে বসতে রাজি না হয়ে উল্টো আমার স্বামী ও আমার ছেলেদেরকে হত্যা করে লাশ গুম করে ফেলবে বলে প্রতিনিয়ত হুমকি দিতে থাকে। ঠিক এক সপ্তাহ পরই ১৫ এপ্রিল ২০২৫ইং (শনিবার) সকাল ৮:৩০টায় জানতে পারি আমার স্বামী শবদর আলীকে মেরে মৃত দেহ আম গাছে ঝুঁলিয়ে রাখে এই বলে তিনি কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।
সবশেষে মৃত শবদর আলীর স্ত্রী রিনা বেগম বলেন, আমার স্বামীকে যারা হত্যা করেছে তাদেরকে আইনের মাধ্যমে ফা্ঁসিতে ঝুঁলিয়ে মৃত্যুদন্ড দেওয়ার জন্য কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপার ও চান্দিনা থানা অফিসার ইনচার্জকে অনুরোধ করছি।
শবদর আলীর মৃত্যুর ব্যাপারে বরকইট ইউনিয়ন তাঁতীদলের সভাপতি মো: নাছির বলেন, পোস্ট মর্টেম রিপোর্টে শবদর আলীকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয় ও মৃত্যু নিশ্চিত করে তাকে আম গাছে ঝুঁলিয়ে দেওয়া হয় বলে জানতে পারি। আমরা বরকইট বাসী শবদর আলী হত্যার প্রকৃত আসামীদের গ্রেফতার করে ফা্ঁসিতে ঝুঁলিয়ে মৃত্যুদন্ড দেওয়ার জন্য প্রশাসনের নিকট জোর দাবি জানাচ্ছি।
এ বিষয়ে চান্দিনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাবেদ উল ইসলাম নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, শবদর আলী পেশায় একজন ভাঙ্গারী ব্যবসায়ী ছিল। তার হত্যার ঘটনায় পাঁচ জনের মধ্যে তিন জন আসামীকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে এবং একজন আসামী শবদর আলীর মৃত্যুর ঘটনার ৮-১০দিন পর প্রবাসে চলে যায় ও একজন বাড়ি থেকে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। অতিদ্রুত তাদেরকেও আইনের আওতায় আনা হবে।
সম্পাদক : মোঃ জহির , উপদেষ্টা : জসিম উদ্দিন খোকন ,বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: ফোন: 𝟎𝟏𝟔𝟐𝟗𝟏𝟎𝟎𝟗𝟐𝟔
বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: 𝟎𝟏𝟔𝟎𝟖𝟔𝟗𝟕𝟖𝟗𝟗
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত