জলিলুর রহমান জনি সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি:
দেশজুড়ে অব্যাহত বৃষ্টির প্রভাবে সবজির দাম বৃদ্ধির ফলে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা কঠিন হয়ে উঠেছে।
ভাদ্রের শুরুতে অব্যাহত বৃষ্টিপাতের কারণে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে শাক-সবজি উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। বিশেষ করে সিরাজগঞ্জের বিভিন্ন হাট-বাজারে গত এক সপ্তাহে সবজির দাম প্রায় দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ বেড়ে গেছে। এর ফলে সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতায় বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে।
বাজারের বিক্রেতাদের মতে, দিনভর মেঘলা আকাশ ও বৃষ্টির কারণে কৃষকদের ক্ষেতের সবজি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, যার ফলশ্রুতিতে উৎপাদন কমে গেছে। উৎপাদন কমে যাওয়ায় সরবরাহও হ্রাস পেয়েছে, যা পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে সব ধরনের সবজির দামে প্রভাব ফেলেছে।
কিছু ক্রেতা অবশ্য ভিন্ন মত প্রকাশ করেছেন। তারা অভিযোগ করছেন যে সঠিক মনিটরিংয়ের অভাবে বাজারে দামের অস্থিরতা কমছে না। কিছু অসাধু ব্যবসায়ীও আবহাওয়ার অজুহাতে পাইকারি পর্যায়ে দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। ফলে খুচরা ক্রেতাদের অনেক বেশি দামে সবজি কিনতে হচ্ছে।
সিরাজগঞ্জের বিভিন্ন বাজারে কাঁচা সবজির পাশাপাশি ময়দা, ডাল, সয়াবিন তেল, পেঁয়াজ, কাঁচামরিচ, আদা, ডিম, মুরগি, গরুর মাংস ও মাছের দামও বেড়ে গেছে। এই পণ্যের দাম বৃদ্ধিতে নিম্ন ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো দিশেহারা হয়ে পড়েছে।
এক সপ্তাহে আগেও বাজারে খুচরা পর্যায়ে
প্রতি কেজি দেশি শসা ৪০ টাকা, কাকরোল ৪০ টাকা, পটোল ৩০ টাকা, করলা ৬০ টাকা, বেগুন ৫০ টাকা, কচুমুখি ৫০ টাকা, মুলা ৪০ টাকা, ঢেড়স ৪০ টাকা ও পেঁপে ৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। প্রতিটি লাউ বিক্রি হয়েছে ৩০ টাকায়। কাঁচা মরিচের দাম ছিল ১৬০ টাকা কেজি। মুরগির বাজারেও দামের ঊর্ধ্বগতি। ব্রয়লার মুরগির কেজি ১৬০-১৮০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ১৪৫-১৫০ টাকার মধ্যে ছিল। পাকিস্তানি মুরগি ৩০০-৩২০ টাকা এবং দেশি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৫৫০-৬০০ টাকায়। খাসির মাংস ১১০০ টাকা, আর গরুর মাংস ৬৫০-৭৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রোটিনের আরেক উৎস ডিমের দামও বাড়ন্ত। ফার্মের মুরগির ডিম প্রতি হালি ৪৮ থেকে ৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। রুই মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকায়।
পাম অয়েল ও সুপার পাম অয়েলের দামও বেড়েছে যথাক্রমে ১০ ও ১১ টাকা করে। খোলা ময়দার দাম বেড়ে হয়েছে ৪৪ টাকা কেজি, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৩৭ টাকা। মসলার মধ্যে দেশি পেঁয়াজ এখন ৮৫ টাকা কেজি, যা গত সপ্তাহে ছিল ৬০-৬৫ টাকা। দেশি রসুন ১৪০ টাকা কেজি, আমদানি করা রসুন ২০০ টাকা। আদা বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ২১০ টাকা কেজি দরে। এলাচের কেজি ৪৬০০ টাকা মিডিয়াম নিম্ন মানেরটা ৪২০০ টাকা কেজি। যেটা সব থেকে ভালো এলাচ সেটার দাম ৫২০০ টাকা কেজি।
মঙ্গলবার ও বুধবার উপজেলার বিভিন্ন বাজারে ঘুরে দেখা গেছে, খুচরা পর্যায়ে পণ্য বিক্রি দেড় থেকে দুই গুণ বেশি দামে হচ্ছে। যেমন, এক কেজি কাঁচা মরিচ ২০০-২৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা এক সপ্তাহ আগেও ছিল ১৬০ টাকা।
বাজারের সবজি বিক্রেতা কাওসার জানান, “বাজারে একমাত্র পেঁপে ছাড়া কোনো সবজির দামই এখন ৬০ টাকার নিচে নেই। ক্রেতারা আমাদের এসে অনেক কথা বলে কিন্তু আমরাতো কম দামে বিক্রি করতে পারি না। চড়া দামে কিনে আনতে হয়।”
সাধারণ মানুষ বিশেষ করে গৃহিণীরা বাজারে এসে অনেকটাই হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরছেন। এক গৃহিণী বলেন, “সাতদিন পরে বাজারে এসে দেখি সবকিছুর দাম বেড়ে গেছে। এখন কি কিনবো বুঝে উঠতে পারছি না।”
বৃষ্টির সাথে মসলা ও তেলের দাম বৃদ্ধির কোনো সম্পর্ক না থাকলেও, সয়াবিন তেলের দাম বেড়ে হয়েছে প্রতি লিটার ১৬২ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৫২ টাকা। ময়দার দাম বেড়ে হয়েছে প্রতি কেজি ৪৪ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৩৭ টাকা।
বাগবাটি বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, কাঁচা পণ্যের দাম সরবরাহ ব্যবস্থার ওপর নির্ভর করে। একটানা বৃষ্টির কারণে সরবরাহ কমে গেছে, তাই এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। আবহাওয়ার পরিবর্তন হলে সবজির দাম কমার সম্ভাবনা রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সমস্যার সমাধান করতে হলে সঠিক মনিটরিং ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা নিতে হবে। এছাড়া কৃষকদের সহায়তা প্রদান এবং সরবরাহ চেইন উন্নত করার মাধ্যমে বাজার স্থিতিশীল রাখা যেতে পারে।